Header Ads

Header ADS

ক্লাউড কম্পিউটিং

 

বর্তমান এই প্রযুক্তির যুগে যত প্রযুক্তি দেখছি তার মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন প্রযুক্তি হলো কম্পিউটার। প্রায় সকল প্রযুক্তিই আজ কম্পিউটার দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত বা কোন না কোনভাবে সম্পর্কিত। কম্পিউটারের ব্যবহার এতটাই বিস্তৃত হয়ে পড়েছে যে, বর্তমান সময়ে আমাদের একটি দিনও প্রযুক্তির এই শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ছাড়া কল্পনা করতে পারিনা। নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক, একাডেমিক এবং বিশেষ করে সায়েন্টিফিক বিভিন্ন গবেষনা কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন কনফিগারেশনের কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়। যেমন- ভিডিও গেমিং, ইমেজ প্রসেসিং, ভিডিও এডিটিং এর কাজের জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন হয়। সাধারণত আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটারের প্রাইমারি মেমরি সাইজ কম হওয়ায় খুব বেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় না। অনেক ভারী সফটওয়্যার আছে যেগুলো ভালভাবে চালাতে ভাল কনফিগারেশনের কম্পিউটারের দরকার। যা অনেক ক্ষেত্রে অনেক ব্যয়বহুল। এসব কাজ সম্পাদনের জন্য নতুন কম্পিউটার ক্রয় না করে শুধুমাত্র ভার্চুয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ভাড়া নেওয়া, ভার্চুয়াল স্টোরেজের সেবা গ্রহণ বা ভারী সফটওয়্যারগুলোর ভার্চুয়াল সেবা গ্রহণ করা যায় এমন এক ধরনের প্রযুক্তির ধারণা দেন জোসেফ কার্ল রবনেট লিকলিডার নামের এক ভদ্রলোক। সে প্রযুক্তির নাম হলো ক্লাউড কম্পিউটিং



ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর চাহিদার আলোকে ক্লাউড ভেন্ডরকে ফি পরিশোধ পূর্বক বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার সেবা ( সফটওয়্যার, স্টোরেজ, এবং প্রসেসিং ক্ষমতা ইত্যাদি) প্রদান করা। অর্থাৎ নিজের কম্পিউটারের স্টোরেজ, সফটওয়্যার বা প্রসেসর ব্যবহার না করে দূরবর্তী কোন ক্লাঊড ভেন্ডরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবহার করে কাজ সম্পাদন করা।

এই প্রযুক্তিকে ক্লাউড কম্পিউটিং বলার কারণ হচ্ছে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে দূরবর্তী কোন ক্লাউডে বা ভার্চুয়াল স্পেসে রাখা কোন তথ্য বা বিভিন্ন কম্পিউটিং সেবা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো ব্যবহারকারী পেতে পারে।

ক্লাউড কম্পিউটিং পাব্লিক এবং প্রাইভেট উভয় প্রকারই হতে পারে। পাব্লিক ক্লাউড তাদের সেবাগুলো কোন ধরনের ফি ছাড়াই প্রধান করে থাকে। যেমন- গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স ইত্যাদি। অন্যদিকে প্রাইভেট  ক্লাউড তাদের সেবাগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের বিনিময়ে আগ্রহী ব্যবহারকারীদের প্রদান করে থাকে। এছাড়াও হাইব্রিড ক্লাউডও হতে পারে। এটা মূলত পাব্লিক এবং প্রাইভেট ক্লাউডের সমন্বিত রূপ। অর্থাৎ এ প্রকার ক্লাউডের কিছু সেবা গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত এবং কিছু সেবা গ্রহনের জন্য চার্জ প্রদান করতে হবে।

ক্লাউড কম্পিউটিং সাধারণত তিন ধরণের সেবা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ক্লাউড কম্পিউটিং যত ধরণের সেবা দিয়ে থাকে সেগুলোকে নিম্নোক্ত তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

1)    Infrastructure as a Service (IaaS)

2)    Software as a Service (SaaS)

3)    Platform as a Service (PaaS)

Infrastructure as a Service (IaaS): ক্লাউড এই পদ্ধতিতে অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সার্ভার, আইপি বেসড স্টোরেজ সংযোগ ইত্যাদি সেবা প্রদান করে থাকে। এই সেবা প্রদানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভেন্ডর হচ্ছে IBM Cloud এবং Microsoft Azure.

Software as a Service (SaaS): ক্লাউড এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন কারো কম্পিউটারে যদি ডাটা এনালাইসিস অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করা না থাকে, তাহলে সে সহজেই এই সেবার মাধ্যমে এসপিএসএস ব্যবহার করে ডাটা এনালাইসিস করতে পারবে। এই সেবা প্রদানের অন্যতম জনপ্রিয় ভেন্ডর হচ্ছে মাইক্রোসফট অফিস ৩৬৫  যেটা মূলত ইমেইল সেবা প্রদান করে থাকে।

Platform as a Service (PaaS): মুলত ক্লাউড এ পদ্ধতিতে তাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচারে গ্রাহক বা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরনের ডেভলপমেন্ট টুল সরবরাহ করে থাকে অর্থাৎ সফটওয়্যার তৈরির জন্য যে ডেভেলপমেন্ট টুল দরকার হয় সেগুলো প্রদান করে থাকে। বহুল পরিচিত PaaS  সেবার সরবারহকারীরা হচ্ছে – AWS Elastic Beanstalk এবং Google App Engine.

ক্লাউড কমপিউটিং আসলে আমরা কেন ব্যবহার করবো ? অবশ্যই এর কিছু চমকপ্রদ উপকারীতা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ক্লাউড ভেন্ডর থেকে যেকোন কনফিগারেশনের ভার্চুয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার স্বল্প বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবে যেটার ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অনেক ব্যয়বহুল। ক্লাউড স্টোরেজে ডাটা রাখলে যে কোন জায়গা থেকে আমরা ঐ ডাটার এক্সেস পাবএছাড়া বিভিন্ন সংস্থা বা কোম্পানি তাদের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তিত থাকে সেক্ষেত্রে কোন কারণে যদি ডাটা ক্র্যাশ করে বা হারিয়ে যায় তখন ঐ ডাটা ক্লাউড থেকে পুনরুদ্ধার যাবে।

বর্তমান বিশ্বে ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভেন্ডর গুলো হচ্ছে – AWS (Amazon Web Service), Google Cloud Platform, Microsoft Azure ইত্যাদি। এছাড়াও আরও কিছু ভেন্ডর রয়েছে যেমন – অ্যাপল, সাইট্রিক্স, আইবিএম, আলিবাবা ওরাকল ক্লাউড, ভিএমওয়্যার ইত্যাদি।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর কিছু জনপ্রিয় সেবা রয়েছে যেগুলো হয়তো আমরা ব্যবহার করে থাকি কিন্তু জানিনা যে এগুলো ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সেবা যেমন গুগল ডক, ইমেই্‌ ক্যালেন্ডার, স্কাইপ্‌ হোয়াটসঅ্যাপ, এবং বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন যেটার মাধ্যমে আমরা অনলাইনে বিভিন্ন কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে থাকি সেটা হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ্লিকেশন জুম অ্যাপ।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর ধারণা অনেক আগের হলেও ২০০৬ সালের দিকে মূলত Amazon এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এমনকি বর্তমান সময়ের গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্লাউড কমপিউটিং। ২০১৫ সালে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক সেন্ট্রাল পার্টনারস এর গবেষণায় তারা দেখিয়েছিলেন যে, ২০১৬ সালে ক্লাউড SaaS সেবার  মুনাফা গিয়ে দাঁড়াবে ৩২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের কোভিড-১৯ পরিস্থিতির পর থেকে ক্লাউড সেবার চাহিদা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র ২০২০ সালেই জুমের ব্যবহার বেড়েছে শতকরা ১৬০ ভাগ। এমনকি ধারনা করা হচ্ছে যে, ২০২১ সালে SaaS সেবার মুনাফা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১১৮ বিলিয়ন ডলার।

তথ্যসুত্রঃ Investopedia, Wikipedia, TechTarget, ZDNet 

No comments

Theme images by enot-poloskun. Powered by Blogger.